ঢাকা, শুক্রবার, ৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১

ইরান–ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : মধ্যপ্রাচ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস স্পষ্ট

২০২৪ এপ্রিল ২১ ১৬:৪০:৪১
ইরান–ইসরায়েল দ্বন্দ্ব : মধ্যপ্রাচ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস স্পষ্ট

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : হামলার পর ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক নীরবতা রাজনীতির মঞ্চে ইরানকে বেশ সুবিধা দিয়েছে। শত্রু হামলা চালালে, ইরান পালটা আক্রমণ চালাবে — তেহরানকেও তার এই নীতির ব্যবহার করতে হয়নি আর।

ফলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আপাতত কিছুটা কমেছে। এই মুহূর্তে ইরান তার প্রভাব নিয়ে কিছুটা আত্মতুষ্টিতে রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বিপজ্জনক দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে সর্বশেষ দ্বন্দ্ব আপাতত শেষ হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। ইসরাইল এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের ওপর শুক্রবারের হামলার দায় স্বীকার করেনি।

অন্যদিকে, ইরানের সামরিক ও রাজনৈতিক নেতারা এই হামলাকে খাটো করে দেখছেন। তারা এই হামলায় বড় ধরনের ক্ষতির কথা নাকচ করে দিয়েছে এবং হামলার প্রভাব নিয়ে মজাও করেছে।

শুক্রবারের হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্রের ধরন এবং লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে তা পরস্পরবিরোধী এবং অসম্পূর্ণ।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের ইসফাহান ও উত্তর-পশ্চিম তাব্রিজে হামলায় ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ইরান বলছে, ছোট বিস্ফোরক ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়েছে।

তবে ইরানে হামলার জন্য ড্রোন ব্যবহারের ইতিহাস রয়েছে ইসরায়েলের। ইরানের অভ্যন্তরে গোপন অভিযানের সময় এই ড্রোনগুলি ছিল ইসরায়েলের অন্যতম অস্ত্র।

ইসফাহানে দারুণ মাত্রার ইসলামিক ঐতিহ্য রয়েছে। তবে বর্তমানে এই প্রদেশটি পরিচিত ইসফাহান নিউক্লিয়ার টেকনোলজি সেন্টার ও একটি বড় বিমানঘাঁটির জন্য। এই ঘাঁটি থেকেই ১৪ এপ্রিল ইসরায়েলে হামলা পরিচালনা করেছিল ইরান।

ইসফাহান প্রদেশে গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকায় ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল উৎপাদন করে ইরান। ইসরায়েলের পালটা হামলা ছোট হলেও এর একটি শক্তিশালী বার্তা আছে — ইসরায়েলের কাছে ইরানের গুরুত্বপূর্ণ এসব স্থাপনার গোয়েন্দা তথ্য আছে এবং তেল আবিব চাইলেই যেকোনো সময় এখানে হামলা চালাতে পারে।

মার্কিন কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে ইসরায়েল প্রদেশের নাতাঞ্জ শহরে একটি বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও লক্ষ্যবস্তু করেছে। তবে হামলা সফল হয়েছে কি না তা জানা যায়নি।

হয়তো এই আক্রমণ মাত্র শুরু। কিন্তু আপাতত এটি ছিল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির জন্য তার ৮৫তম জন্মদিনে একটি অপ্রত্যাশিত উপহার।

হামলার পর ইসরায়েলের আনুষ্ঠানিক নীরবতা ইরানকে রাজনৈতিক মঞ্চে যথেষ্ট সুবিধা দিয়েছে। শত্রুরা আক্রমণ করলে ইরান প্রতিশোধ নেবে — এমন নীতি তেহরান আর ব্যবহার করেনি।

ফলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আপাতত কিছুটা কমেছে। এই মুহূর্তে ইরান তার প্রভাব নিয়ে কিছুটা আত্মতুষ্টিতে রয়েছে।

এই মুহূর্তে ইরান 'কৌশলগত প্রতিরোধ'-এর নীতি শুরু করেছে। গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলার পর নতুন এই কৌশল শুরু করে ইরানের। ওই হামলায় রেভল্যুশনারি গার্ডের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ মোট সাত কর্মকর্তা নিহত হন।

গাজা যুদ্ধের শেষ ছয় মাসে ইসরাইল তাদের লক্ষ্যবস্তুতে হামলার পরিসর বাড়িয়েছে। এরপর থেকে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি এই বিষয়ে কিছু করার জন্য তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছেন।

এদিকে, গত এক দশক ধরেই ইসরায়েল–ইরানের মধ্যে এই সংঘাত চলে আসছে। আগে এটি ছিল ছায়াযুদ্ধ ও গোপন অভিযানে সীমাবদ্ধ। এই মুহূর্তে এসে তা প্রকাশ্য দ্বন্দ্বে রূপ নিয়েছে।

তবে উভয় পক্ষের মৌলিক অগ্রাধিকার এখন একটি: আরেকটি আক্রমণ প্রতিরোধ করা। উভয় দেশকে নিশ্চিত করতে হবে যে তাদের ভূমিতে আর কোনো হামলা হবে না। এটি ব্যর্থ হলে, উভয় পক্ষকেই এর জন্য মূল্য দিতে হবে।

আপাতত, মধ্যপ্রাচ্যে স্বস্তির স্পষ্ট অনুভূতি রয়েছে। দূর দেশের অনেক রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়েছে। আপাতত, সবাই চায় না কোনো ধ্বংসযজ্ঞ। তবে এই শান্ত পরিবেশ মুহূর্তের মধ্যে উত্তাল হয়ে উঠতে পারে, তা অবিশ্বাস্য নয়।

লিস ডুসেট: বিবিসি'র প্রধান আন্তর্জাতিক প্রতিবেদক

আওয়াল/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে