ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মার্কেট মেকারদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ- একটি পর্যালোচনা

২০২৪ জানুয়ারি ২৮ ২২:২২:৪৯
মার্কেট মেকারদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ- একটি পর্যালোচনা

জয়ন্ত দে : গেল সপ্তাহের শুরুর দিকে (২১-২৪ জানুয়ারী) মার্কেটে সেল প্রেসার থাকলেও ধীরে ধীরে সেল প্রেসার কমতে থাকে। আর ধারাবাহিকতায় আমরা আশা করেছিলাম, এই সপ্তাহে মার্কেট ব্যালান্স হতে শুরু করবে। কিন্তু গত কয়েক দিনের সুচকের উঠানামা অনেকটা কৃত্রিম বলে মনে হচ্ছে। কেন মনে হচ্ছে ? মার্কেটে বেশিরভাগ শেয়ারের দর কমলেও অনেক সময় দেখা যায় ইনডেক্স পজিটিভ রয়েছে কিংবা সামান্য নেগেটিভ। আবার এই সপ্তাহে শুরুতে মার্কেটে গুরুতর সেল প্রেসার না থাকলেও ইনডেক্স বেশ নেগেটিভ। এটা করা হয় বড় মূলধনী কিছু কোম্পানির শেয়ারের দর উঠানামার মাধ্যমে ।

গত বৃহস্পতিবার ও আজকের মার্কেট ছিল অনেকটাই এই রকম। প্রথমে বড় মূলধনের কিছু কোম্পানির দর কমিয়ে মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট লেভেল ভেঙে দেওয়া, পরে মার্কেট সেন্টিমেন্ট নেতিবাচক ধারায় প্রভাবিত করে শেয়ার কেনার অপকৌশল লিপ্ত রয়েছে অসাধু চক্র। বর্তমানে ডিমান্ড আর সাপ্লাই এর মাধ্যমে সূচক ঠিক মত নির্ধারিত হচ্ছে না। মার্কেট মেকারদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ।

সেক্টর অনুসারে আমি কিছু লিডিং স্টক এখানে তুলে ধরছি, যে স্টকগুলোর সেল প্রেসার নেই। বরং মার্কেট প্যানিক এর কারণে দাম কমেছে । গত সপ্তাহে এই স্টকগুলোতে বেশিরভাগ সেল হওয়ার পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। কিন্তু এই সপ্তাহে সেল ভলিউম অতোটা ছিল না, তারপরও যথেষ্ট পতন হয়েছে। যেগুলো হলো-

ব্যাঙ্ক সেক্টর : আই এফ আই সি ব্যাঙ্ক / ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক / গ্লোবাল ইসলামী ব্যাঙ্ক টেক্সটাইল সেক্টর : পি টি এল / মতিন স্পিনিং / মালেক স্পিনিং / মেট্রো স্পিনিং ফিন্যান্স : লংকা বাংলা / ডি বি এইচ / আই ডি এল সি / ইঞ্জিনিয়ারিং : এস এস স্টিল / জি পি এইচ ইস্পাত / এন পলিমার / ইফাত অটো ফার্মাসিউটিক্যাল : বিকন ফার্মা / বেক্সিমকো ফার্মা / একমি ল্যাব / ফার্মা এইড ইন্সুরেন্স সেক্টরে আজ বেশ কিছু স্টক ইতিবাচক ধারায় ছিল

এছাড়া, একটি পক্ষ দীর্ঘদিন যে দাবী করছিলেন, ফ্লোর তুলে দিলে মার্কেট স্বাভাবিক হবে এবং বিনিয়োগকারীগণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। বস্তুতঃ ফ্লোর প্রত্যাহার করার পর যারা মার্জিন বিনিয়োগকারী, তারাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। অনেকে ফোর্স সেলের শিকার হয়েছেন। এছাড়াও দীর্ঘ দেড় বছর ফ্লোরে আটকে থাকার কারণে মোটা অংকের সুদ তাদের গুনতে হচ্ছে। এখন বিনিয়োগকারীদের যে ক্ষতি হলো তার দায়ভার কে নেবে? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আল আমিন স্যার মার্কেট বিশ্লেষণে খুব সুন্দরভাবে এই বিষয়টিকে তুলে ধরেছেন। এজন্য বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে উনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

প্রকৃতপক্ষে, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হলে মার্কেট ভালো হবে- এই ধারণাটাই আমি ঠিক মনে করছি না। কারণ মার্কেট ছিল অপরিপক্ষ। ফ্লোর প্রত্যাহার করলে যে সেল প্রেসার আসবে, সেটার জন্য মার্কেট রেডি ছিল না। এছাড়া মার্কেটে ম্যানুপুলেশন রোধ করা যাচ্ছিল না। যার কারণে কিছু অপ্রীতিকর প্রাইস অ্যাকশন হলো, আর অভিযোগ করা হচ্ছিল ফ্লোর থাকার কারণে ম্যানুপুলেশন হচ্ছে। মার্কেটে দীর্ঘদিন ধরে ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে না। কেন ডিমান্ড সৃষ্টি হচ্ছে না? আংশিক ফ্লোর প্রাইস থাকার কারণ? কিন্তু আমি মূলত সামগ্রিক বৈশ্বিক এবং আভ্যন্তরিন অর্থনীতির একটি বড় কারণ বলে মনে করি। এছাড়া ইলেকশনকে ঘিরেও কিছুটা অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ছিল।

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, ফ্লোর প্রাইস বহাল রাখাই কি ঠিক ছিল? আমাদের প্রথমে যে বিষয়টি ভাবা উচিত, সেটি হলো ফ্লোর দেয়া হলো বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রাখার জন্য। বিনিয়োগকারীদের একটি পক্ষের দাবি ছিল - সূচক আরো ২০০ - ৩০০ পয়েন্ট বাড়ার পর ফ্লোর প্রত্যাহার করা। এছাড়া ফ্লোর প্রত্যাহার ধাপে ধাপে সময় নিয়ে (১-২ মাস ) করলে মার্কেটের উপর বাড়তি চাপ হতো না। তাই আমি মনে করি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পূর্বে এই বিষয়গুলো ঠিক মতো নির্ণয় করা হয়নি আর এটি ছিল হটকারী সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্তটি নেয়া হয়েছিল একটি পক্ষের চাপে পড়ে। আমরা প্রত্যাশা করি শুধুমাত্র একটি বিশেষ পক্ষকে যেন সুবিধা দেওয়া না হয়। সামগ্রিক মার্কেট বিবেচনায় যেন পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলো নেয়া হয়। আর বাজারে কোনো অসাধু চক্র যেন সুবিধা নিতে না পারে, সেজন্য কর্তৃপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ দেখার দায়িত্ব কর্তৃপক্ষের। যে বিষয়টি কর্তৃপক্ষ সব সময়ে জোর দিয়ে বলেও।

এই বক্তব্য আরও বিস্তারিত দেখতে নিচে ক্লিক করুন-

ইনডেক্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে শেয়ার কিনার অপকৌশক অসাধু চক্রের

মার্কেট আওয়ার/২৮ জানুয়ারি, ২০২৪

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে