ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইতিহাসের পাতায় বেক্সিমকো লিমিটেড

২০২২ ডিসেম্বর ০৯ ১৮:৫৬:৩০
ইতিহাসের পাতায় বেক্সিমকো লিমিটেড

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২০ সালের আগস্ট মাসের পর শেয়ারবাজারে একক রাজত্ব চলে বেক্সিমকো লিমিটেডের। প্রতিদিনই কোটি কোটি শেয়ারের লেনদেন। প্রতিদিন এবং সাপ্তাহিক লেনদেনের বড় অংশ জুড়েই ছিল কোম্পানিটির শেয়ার। দুই বছরের লেনদেনে অন্য কোন কোম্পানি এর ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারেনি।

কিন্তু এখন কোম্পানিটির সেই জৌলুস নেই। নেই বিনিয়োগকারীদের বাঁধভাঙ্গা সেই জোয়ারও। মেগা কোম্পানিটি এখন অযত্ন-অবহেলায় যেন ফ্লোর প্রাইসে ঘুমাচ্ছে। কোনো কোনো দিন দুই-চার হাজার শেয়ারের হাতবদল হয়। আবার কেনো কোনো দিন হাজারের নিচেও গড়ায়। কোম্পানিটি যেন এখন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে। বাস্তবে এর উপস্থিতি টের পাওয়াই দুস্কর।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কোম্পানিটির মুনাফা ও অগ্রগতি এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার এভাবে ঝিমিয়ে পড়ার তেমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি। তারা বলছেন, কোম্পানির শেয়ারের বড় বিনিয়োগকারীরা অবস্থা পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। যে কারণে শেয়ারটি ঝিমিয়ে পড়েছে। তবে যেকোনো সময়ে এটি ফের জেগে উঠতে পারে।

বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, শেয়ারবাজারে গতি ফিরতে হলে বেক্সিমকোর মতো শেয়ারের গতিও ফিরতে হবে। এখন সার্বিকভাবে শেয়ারবাজার গতিহীন। যে কারণে মৌলভিত্তির শেয়ারগুলোও অচলায়তনে বন্দী রয়েছে। এসব শেয়ারে গতি ফিরলে শেয়ারবাজারেও চাঙ্গাভাব ফিরে আসবে।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পাগুলোর মধ্যে ব্যাংক বাদে সর্বনিম্ন মূল্য আয় অনুপাত বা পিইর শেয়ার বেক্সিমকো লিমিটেড। ২০২০ সালের আগস্টের আগে কোম্পানিটির শেয়ার ১২ টাকার নিচে কেনাবেচা হয়েছে। তখন কোম্পানিটির বছরব্যাপী শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে দেড় ১ টাকার আশেপাশে। বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ডও পেত ৫ শতাংশের ঘরে। সবদিক দিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার ছিল অন্যান্য শেয়ারের মতো স্বাভাবিক শ্রেণির।

কিন্তু ২০২০ সালের আগস্টের পর কোম্পানির চেহারা বদলে যেতে থাকে। একদিকে মুনাফায় দেখা যায় জৌলুস, অন্যদিকে লেনদেনে অপ্রতিরোধ্য জোয়ার। কিছুদিনের মধ্যেই শেয়ারবাজারে মুকুটহীন সম্রাটের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয় শেয়ারটির শেয়ার। এক বছরের মাথায় ২০২১ সালে নভেম্বরে কোম্পানিটির শেয়ার দর ১৯০ টাকার উপরে উঠে যায়। এই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ার দেখা যায়। তারপর ধীরে ধীরে সেই উম্মাদনা কমতে থাকে। এখনতো বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ যেন হিম শীতল অবস্থায় উপনীত হয়েছে।

চলতি বছরের শুরু থেকেই কোম্পানিটির প্রতি বিনিয়োগকারীদের বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে ভাটা পড়তে দেখা যায়। তারপরও শেয়ারবাজারে এর নেতৃত্ব অটুট থাকে। গত নভেম্বরের মাঝামাঝিও কোম্পানিটির দাপট ছিল মোটামুটি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। নভেম্বরের শেষদিকে হঠাৎ করে শেয়ারটি নিস্তেজ হতে থাকে। অঘোষিতভাবে স্থান করে নিতে থাকে ইতিহাসের পাতায়। এখন রীতিমতো ক্লান্ত-পরিশান্ত হয়ে ফ্লোর প্রাইজে যেন চিরনিদ্রায় স্থান করে নিয়েছে। এক মাস আগেও যে শেয়ারটির লাখ লাখ ক্রেতার আগ্রহের কেন্দ্রে ছিল শেয়ারটি, মাত্র কিছুদিনের ব্যবধানে সেটির চাহিদা এখন প্রায় শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে।

আর্থিক চিত্র

২০১৭ সালে বেক্সিমকো লিমিটেডের শেয়ারপ্রতি মুনাফা ছিল ১ টাকা ২৯ পয়সা, ২০১৮ সালে ১ টাকা ৫৫ পয়সা, ২০১৯ সালে ১ টাকা ৬৩ পয়সা, ২০২০ সালে ৫১ পয়সা, ২০২১ সালে ৭ টাকা ৫৩ পয়সা এবং ২০২২ সালে ১৪ টাকা ৩২ পয়সা।

ডিভিডেন্ড চিত্র

২০১৭ সালে কোম্পানিটি ডিভিডেন্ড দিয়েছে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০১৮ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ ও ৫ শতাংশ বোনাস, ২০১৯ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ, ২০২০ সালে ৫ শতাংশ ক্যাশ, ২০২১ সালে ৩৫ শতাংশ ক্যাশ এবং ২০২২ সালে ৩০ শতাংশ ক্যাশ।

সর্বশেষ চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ৩ টাকা ৮৩ পয়সা। যা আগের বছর একই সময়ে ছিল ৪ টাকা ১১ পয়সা। সর্বশেষ শেয়ার দরের ভিত্তিতে এর পিই রেশিও দাঁড়িয়েছে ৭.৫৫ পয়েন্টে।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে