ঢাকা, শনিবার, ৭ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

প্রতারণা এড়াতে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের নাম পরিবর্তন চেয়ে চিঠি

২০২৩ জুলাই ২১ ১৭:১৬:০৩
প্রতারণা এড়াতে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের নাম পরিবর্তন চেয়ে চিঠি

ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স নামের আগে ট্রাস্ট শব্দ ব্যবহার করে এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচয় তুলে ধরে মানুষের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে এমন অভিযোগ এনে গত ১১ জুন আইডিআরএ-এর কাছে চিঠি দেওয়া হয়।

চিঠিতে বলা হয়, একটি চক্র ‘ট্রাস্ট’ শব্দটি নিজেদের কোম্পানির নামের অংশ হিসেবে ব্যবহার করে ওই কোম্পানিকে সেনাবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি মানুষের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করে তাদের হয়রানি করছে বলে তারা অভিযোগ পেয়েছেন।

এদিকে ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হলেও এর কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আইডিআরএ থেকেও তাদের কিছু বলা হয়নি।

চিঠিতে বলা হয়, আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ২০১১ সালের ২ মে পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন লাভ করে। পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস আইনের বিধি অনুসারে কোনো নামের বা শব্দের পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরের নিবন্ধন থাকলে সেই নাম বা শব্দ অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে না।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি নিজের নিবন্ধনের জন্য ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তরে আবেদন করে। কিন্তু আবেদনপত্রে তাদের নামের সঙ্গে ইংরেজি ও বাংলা বর্ণে ‘ট্রাস্ট’ শব্দটি থাকায় অধিদপ্তর থেকে তারা নিবন্ধন পায়নি। অর্থাৎ ‘আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ ব্যতীত ইংরেজি ও বাংলা বর্ণে ‘ট্রাস্ট’ শব্দটি আর কেউ নামের সঙ্গে ব্যবহার করতে পারবে না।

ফলে আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট এবং আস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সুনাম অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে যে সব বিমা কোম্পানি নামের সঙ্গে ট্রাস্ট বা আস্থা শব্দ ব্যবহার করছে তা দ্রুত অপসারণ করতে আইডিআরএ-এর প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

এদিকে এ বিষয়টি নিয়ে কিছু প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে খাত সংশ্লিষ্টদের মাঝে। তারা বলেছেন, ট্রাস্ট ইসলামী লাইফ ২০১৪ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। এর আগে জয়েন্ট স্টক রেগুলেটরি থেকে কোম্পানি আইন অনুসারে নিবন্ধিত হয়েছে। পরে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছে। চলতি বছর ২৫ ফেব্রুয়ারি কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। অথচ প্রতিষ্ঠাকালে বা দীর্ঘ ১১ বছরের মধ্যে কখনোই নামের বিষয়ে কোনো আপত্তি ওঠেনি।

কোম্পানিটিকে নিবন্ধন পেতে কোম্পানি আইন, বিমা আইন ও সিকিউরিটিজ আইন পরিপালন করতে হয়েছে। এই আইনগুলোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো থেকেও কোনো আপত্তি আসেনি। তাছাড়া আর্মি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের পরিচয় দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে প্রতারণা করার যে অভিযোগ উঠেছে সে সম্পর্কেও সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

তারা বলছেন, যদি কোনো কারণে এখন ট্রাস্ট ইসলামী লাইফকে নাম পরিবর্তন করতে হয় তবে দেশব্যাপী প্রতিষ্ঠানটির সব শাখায় অফিসিয়াল সব ডকুমেন্টস ও দলিলাদিতে এই নাম পরিবর্তন করতে হবে। এক্ষেত্রে বেশ বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হবে। পাশাপাশি যেসব গ্রাহক ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের পলিসি গ্রহণ করেছেন তারা হবেন ভোগান্তির শিকার।

ট্রাস্ট ইসলামী লাইফের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছি। আমাদের পরিচালকরা দেশের ব্যবসায়ী মহলে সুপরিচিত। সেনাবাহিনীর নামে প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা নেই। যদি তাদের আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের নাম পরিবর্তনের মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে প্রতিষ্ঠান অনেক বড় ক্ষতির সন্মুখীন হবে। সেক্ষেত্রে আমরা আইনানুগ পদক্ষেপ নিতে পারি।

নাম পরিবর্তনের এই অভিযোগের বিষয়ে বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জানতে চাইলে কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র ও উপসচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এমন কোনো অভিযোগ করা হয়েছে কিনা- তা আমার জানা নেই। আমি গত এক সপ্তাহ পর্যন্ত অফিসের বাইরে। অভিযোগ এলে প্রথমে চেয়ারম্যান স্যারের দপ্তরে যায়, এরপর অভিযোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হয়।

তবে সংশ্লিষ্ট এক বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে এরই মধ্যে আইডিআরএ পদক্ষেপ নিয়েছে। সূত্রটি জানায়, যেহেতু ট্রাস্ট এবং আস্থা দুইটি সম্পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য নাম তাই এই দুই নামেই বিমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা অনুমোদন দিয়েছে। এক্ষেত্রে নাম পরিবর্তনে আইডিআরএ-এর কোনো আইনগত এখতিয়ার নেই, তা অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠানকে জানাতে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মূলত ট্রেডমার্ক হলো একটি স্বতন্ত্র চিহ্ন, শব্দ, প্রতীক বা নকশা যা একটি পণ্য বা পরিষেবা শনাক্ত করে এবং অন্যসব পণ্য বা সেবা থেকে এটিকে আলাদা করে। ট্রেডমার্ক আইন-২০০৯ এর ২(৮) অনুসারে ‘ট্রেডমার্ক’ হলো কোনো পণ্যের সঙ্গে ব্যবহৃত এমন মার্ক বা চিহ্ন যার ফলে ব্যবসায়ে ওই পণ্যের ওপর চিহ্ন ব্যবহারকারী স্বত্বাধিকারীর অধিকার আছে এমনটা বোঝা যায়। অথবা কোন সেবার সঙ্গে ব্যবহৃত এমন কোন মার্ক বা চিহ্ন যাতে ব্যবসায়ে ওই সেবার ওপর চিহ্ন ব্যবহারকারী স্বত্বাধিকারীর অধিকার আছে বলে প্রতীয়মান হয়।

এছাড়া ট্রেডমার্ক আইনের অন্যান্য বিধানের ক্ষেত্রে, কোন সেবা বা পণ্যের সঙ্গে ব্যবহৃত বা ব্যবহারের জন্য প্রস্তাবিত এমন মার্ক বা চিহ্ন যার স্বত্বাধিকারী বা নিবন্ধিত ব্যবহারকারী হিসেবে ব্যবহারের অধিকার রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

মার্কেট আওয়ার/মামুন

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর