ঢাকা, বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২

১০ বিভাগে শোডাউন করবে বিএনপি

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ০৪ ০৬:৫৪:০৪
১০ বিভাগে শোডাউন করবে বিএনপি

ইতোমধ্যে জেলায় জেলায় দায়িত্বশীল নেতারা হাটসভা, পথসভা, উঠান বৈঠক, প্রস্তুতি সভা ও লিফলেট বিতরণ করছেন। আজকের বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপির কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা। সে লক্ষে ইতোমধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে অবস্থান করছেন সংশ্লিষ্ট নেতারা।

বিএনপি সূত্র জানায়, চলমান আন্দোলনে জনগণকে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্ত করতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। ঢাকাসহ অন্য বিভাগীয় সদরগুলোয় বড় ধরনের শোডাউনের জন্য প্রস্তুত তারা। আজ শনিবার দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে হবে ঢাকা বিভাগের সমাবেশ। বিএনপির পাশাপাশি সমমনা দল এবং জোটও ঢাকায় সাধ্যমতো সমাবেশ করবে। এর মধ্যে ১২ দলীয় জোট ঢাকার বাইরে রংপুর ও সিলেট বিভাগেও সমাবেশ করবে। আজকের কর্মসূচি থেকেই যুগপৎ আন্দোলনের ষষ্ঠ ধাপের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

আলাপকালে বিএনপি নেতারা জানান, চূড়ান্ত আন্দোলনের আগে জনস্বার্থ ইস্যুতে ‘সাদামাটা কর্মসূচি’ অব্যাহত রাখবেন তারা। তবে বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা দাবির পক্ষে জনগণের সমর্থন আদায়ে নিয়মিত কর্মসূচির পাশাপাশি মার্চের শুরুতে কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। যুগপতের ষষ্ঠ ধাপের কর্মসূচি হিসেবে আজ শনিবার নতুনভাবে ‘চলো চলো ঢাকা চলো,’ ‘ঢাকা মহানগরে মানবপ্রাচীর,’ বা আবারও ‘গণঅনশন’, জেলা পর্যায়ে ‘বিক্ষোভ সমাবেশ’ বা ‘গণপদযাত্রা’ কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে। ইতোমধ্যে যুগপতে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট এবং জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সঙ্গে বৈঠকে এ ধরনের প্রস্তাব এসেছে। পরে এসব প্রস্তাব নিয়ে গত মঙ্গলবার বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আলোচনা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সব কর্মসূচিই হচ্ছে শান্তিপূর্ণ। কিন্তু সরকারি দল পাল্টা কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করছে। তবে বিএনপি কোনো উস্কানিতে পা দেবে না। সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন যত বাড়বে, আন্দোলনও শক্তিশালী হবে। এসবের মধ্য দিয়েই তারা লক্ষ্য পূরণে সক্ষম হবেন বলেও জানান দলের বর্ষিয়ান এই নেতা।

ঢাকায় সমাবেশে বিপুল উপস্থিতি নিশ্চিতে মহানগর ছাড়াও আশপাশের জেলায় ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছে। এসব জেলা থেকে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের ঢল নামবে নয়াপল্টনে। এজন্য গত বৃহস্পতিবারও দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথসভা হয়েছে। বিভাগীয় সমাবেশের উদ্দেশ্য—গত ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে কিছুটা ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করা। সমাবেশে উপস্থিতির মাধ্যমে আবারও সাংগঠনিক শক্তির জানান দেওয়া হবে বলে জানান তারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সম্প্রতি বিএনপি বিভাগীয় গণসমাবেশ করেছে। এসব গণসমাবেশে জনসমাগম দেখে ক্ষমতাসীনরা ভীত হয়ে পড়ে। সমাবেশ পণ্ড করতে সবরকম অপচেষ্টা করেছে সরকার ও পুলিশ। তবে কোনো কোনো বাধা নেতাকর্মীদের আটকাতে পারেনি। বরং বিএনপির গণসমাবেশে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে। সুতরাং কোনো তাড়াহুড়ো নয়, মোক্ষম সময়েই বিএনপি চূড়ান্ত আন্দোলনে যাবে এবং সেই আন্দোলনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটবে।

১২ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা ও বাংলাদেশ এলডিপির মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, আমরা যারা ১২ দলে আছি, সবাই পরীক্ষিত। কোনো প্রলোভন বা সরকারের পাতানো ফাঁদে আমরা পা দেব না। এবার ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী যে গণজোয়ার তৈরি হয়েছে, সেই ঢেউ আওয়ামী লীগ মোকাবিলা করতে পারবে না।

শোডাউনে প্রস্তুত বিএনপি :সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় সদরে বিএনপির ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, মারধর ও হয়রানি করা হচ্ছে। কোনো কোনো বিভাগে অনুমতি নিয়ে গড়িমসি করা হচ্ছে। তবুও বিভাগীয় সমাবেশ সফলে ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিয়েছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনগুলো।

বিএনপির রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু বলেন, আজ বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে তারা সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ। রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, তারা রাজশাহী সোনা মসজিদ মোড়ে সমাবেশ করার অনুমতি পেয়েছেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

ময়মনসিংহ বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, সেখানে বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে নেত্রকোনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সম্প্রতি হাটসভা, পথসভা, উঠান বৈঠকে লিফলেট বিতরণসহ বিভিন্ন প্রচারণার কারণে জনগণের সাড়া পেয়েছি। আশা করি, সমাবেশ শান্তিপূর্ণ ও সফল হবে।

সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন জীবন বলেন, তারা প্রশাসনকে সমাবেশের বিষয়ে অবহিত করেছেন এবং এ বিষয়ে সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছেন।

খুলনা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, তারা নগরীর শিববাড়ি চত্বরে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু প্রশাসন অনুমতি দেয়নি। পরে সিটি করপোরেশনের সামনের সড়কে সমাবেশ করবেন। তবে যুবলীগ পাল্টা কর্মসূচি দেওয়ায় তারা গণ্ডগোলের আশঙ্কা করছেন। এ ছাড়া খুলনা, মাগুরাসহ কয়েকটি জেলার ৫ শতাধিক নেতাকর্মী এখনও কারাগারে রয়েছেন। তাদের মুক্তি দাবি করেন অমিত।

চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, কাজীর দেউড়ি নূর আহমেদ সড়কে সমাবেশ করবেন তারা। ফরিদপুর বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক খন্দকার মাশুকুর রহমান মাশুক বলেন, তারা অম্বিকা ময়দানে সমাবেশ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের শহরের বাইরে কোমরপুর মাঠে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

বরিশাল বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান বলেন, তারা সমাবেশের অনুমতি পেয়েছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবেন। তবে পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরিশালের গৌরনদী-আগৈলঝাড়ায় নেতাকর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগ করেন তিনি।

কোন নেতা কোথায় থাকবেন :আজ শনিবার দুপুর ২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কুমিল্লা টাউন হল ময়দানে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, রাজশাহী সোনা মসজিদ মোড়ে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, খুলনা সিটি করপোরেশনের সামনের সড়কে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরিশাল জেলা স্কুল মাঠে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি অফিসের সামনে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ময়মনসিংহ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট মাঠে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সিলেট রেজিস্ট্রি মাঠে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ফরিদপুর কোমরপুর হাই স্কুল মাঠে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, রংপুর মহানগর বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দুপুর ২টায় বিভাগীয় সমাবেশে প্রধান অতিথি ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত থাকবেন বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান।

তিনি জানান, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো এবং আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমনপীড়ন বন্ধ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের মুক্তি, গণতন্ত্রবিরোধী দুর্নীতিবাজ সরকারের পদত্যাগ, অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বিএনপির উদ্যোগে দেশব্যাপী বিভাগীয় সমাবেশ হবে।

সমমনা দল ও জোটের কর্মসূচি :সংশ্লিষ্টরা জানান, এদিন সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেএসডির সভাপতি আ স ম রবসহ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতারা। একই দাবিতে আজ সকাল ১১টায় ঢাকার বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক পাম্প সংলগ্ন সড়কে সমাবেশ করবে ১২ দলীয় জোট। এতে জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দারসহ জোট নেতারা বক্তব্য দেবেন। পুরানা পল্টন আলরাজী কমপ্লেক্স প্রীতম ভবনের উল্টো দিকে সকাল ১১টায় জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদসহ জোট নেতারা উপস্থিত থাকবেন। মতিঝিল নটর ডেম কলেজের উল্টো দিকে বিকেল ৪টায় সমাবেশ করবে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি। গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টুসহ জাতীয় নেতারা উপস্থিত থাকবেন। একই দাবিতে সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমাবেশ হবে। এতে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক হারুন চৌধুরীসহ অন্য নেতারা উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া বিকেল ৩টায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদসহ নেতারা কারওয়ান বাজার এফডিসি সংলগ্ন এলডিপি অফিসের সামনে সমাবেশ করবেন। এ ছাড়া পুরানা পল্টন মোড়ে সমমনা পেশাজীবী গণতান্ত্রিক জোট সমাবেশ করবে বলে জানান জোটের সমন্বয়ক মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।

নোমান/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর