ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

১০ টাকার নিচে মিলছে ৫৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার

২০২২ নভেম্বর ১৯ ১৪:২৮:৫৬
১০ টাকার নিচে মিলছে ৫৭ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার

বিশেষ প্রতিবেদন: ২০২১ সালের ২৭ মে (বৃহস্পতিবার) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধন সূচক ছিল ৫ হাজার ৯৮৫ পয়েন্ট। সেদিন অভিহিত মূল্যের নিচে অর্থাৎ ১০ টাকার নিচে ৫৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এরমধ্যে কোম্পানির শেয়ার ছিল ৩৩টি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট ছিল ২৪টি।

দেড় বছর পর গত ১৭ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) ডিএসইর প্রধান সূচক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২২৬ পয়েন্টে। এ সময়ে সূচক বেড়েছে ২৮১ পয়েন্ট। কিন্তু সূচকের এমন অগ্রগতিতেও অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কমেনি। এদিন অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৫৭-তেই। এরমধ্যে কোম্পানির শেয়ার ছিল ২৮টি এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট ছিল ২৯টি।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্তমানে ফ্লোর প্রাইসে গড়াগড়ি খাচ্ছে তালিকাভুক্ত প্রায় ৭৫ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। যদি ফ্লোর প্রাইসে প্রতিষ্ঠানগুলোর দাম আটকানো না হতো, তাহলে অভিহিত মূল্যের নিচে প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হয়তো সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বসতো।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, অভিহিত মূল্য ১০ টাকার নিচে লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে ভালো ডিভিডেন্ড দেওয়া কোম্পানি এবং মিউচুয়াল ফান্ডও রয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে মূল্য আয় অনুপাত (পিই রেশিও) ১০-এর নিচে নিরাপদ বিনিয়োগ উপযোগি শেয়ার ও ইউনিট।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, ব্যাংক খাতের স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের ১৩ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার এখন ৮ টাকা ৮০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে নজরবন্দী।

এদিকে, পাঁচ বছর যাবত যৎসামান্য হলেও ধারাবাহিক মুনাফায় রয়েছে এবি ব্যাংক। সর্বশেষ বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড দিয়েছে ব্যাংকটি। এর পিই রেশিও ১৪.০১ পয়েন্ট। তারপরও ৯ টাকা ৯০ পয়সা ফ্লোর প্রাইসে ক্রেতাহীন অবস্থান ঘুরপাক খাচ্ছে।

অন্যদিকে, ১০ শতাংশ ক্যাশ ও বোনাস ডিভিডেন্ড দেওয়া ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংকের পিই রেশিও ৫.৮৮ পয়েন্ট। পিই রেশিওর ভিত্তিতে সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ উপযোগির তকমা পাওয়া ব্যাংকটির শেয়ার দাম এখন ৯ টাকা ৯০ পয়সায় ফ্লোর প্রাইসে ঘুমাচ্ছে।

সদ্য তালিকাভুক্ত ব্যাংক খাতের কোম্পানি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শেয়ারবাজারে এসে প্র্রথম দিনেই অভিহিত মূল্যের নিচে ফ্লোর প্রাইসে আটকে গেছে। লেনদেনের প্রথম দিন এভাবে কোনো আইপিওর শেয়ার অভিহিত মূল্যের নেমেছে, এমন তথ্য ডিএসই থেকে পাওয়া যায়নি। কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে অভিষেক হয়েই বিনিয়োগকারীদের আশাভঙ্গ করেছে।

ব্যাংক খাতের আরেক কোম্পানি ইউনিয়ন ব্যাংক পিই রেশিও ৫.২১ নিয়ে ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। শেয়ারবাজারে অভিষেকের বছরে এর আগে অন্য কোনো কোম্পানিকেও এমন দৈন্যদশায় পড়তে দেখা যায়নি।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হওয়া ২৮টি কোম্পানির মধ্যে একক খাত হিসেবে বস্ত্র খাতের সর্বাধিক ১০টি কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। যেগুলো হলো-ডেল্টা স্পিনার্স (৮ টাকা ৫০ পয়সা), ইভিন্স টেক্সটাইল (৯ টাকা ৪০ পয়স), ফ্যামিলি টেক্সটাইল (৪ টাকা ৯০ পয়সা), জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশনস (৬ টাকা), নূরানী ডাইং (৭ টাকা), রিজেন্ট টেক্সটাইল (৯ টাকা ৮০ পয়সা), রিং শাইন (৯ টাকা ৮০ পয়সা), আরএন স্পিনিং (৬ টাকা ২০ পয়সা), তুংহাই নিটিং (৫ টাকা ৮০ পয়সা) এবং জাহিন টেক্সটাইল (৯ টাকা)। কোম্পানিগুলোর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছে, এমন কোম্পানিও রয়েছে।

এর আগে বস্ত্র খাতে অভিহিত মূ্ল্যের নিচে লেনদেন হয়েছিল অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, সিএন্ডএ টেক্সটাইল, খান ব্রাদার্স, মিথুন নিটিং, মোজাফফর হোসেইন স্পিনিং, তাল্লু স্পিনিং এবং জাহিন স্পিনিংয়ের শেয়ার।

দেড় বছর পর কোম্পানিগুলোর মধ্যে অলটেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজের শেয়ার সর্বশেষ লেনদেন হয়েছে ২৪ টাকা ৬০ পয়সায়, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং ১৩ টাকা ৩০ পয়সায়, ঢাকা ডাইং ১৭ টাকা ৯০ পয়সায়, মিথুন নিটিং ১৮ টাকা ৮০ পয়সায়, মোজাফফর হোসেইন স্পিনিং ২৬ টাকা ৫০ পয়সায়, তাল্লু স্পিনিং ১০ টাকা ৩০ পয়সায় এবং জাহিন স্পিনিং ১২ টাকা ৮০ পয়সায়।

অভিহিত মূল্যের নিচে কেনাবেচা হওয়া দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত হলো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত। এ খাতে অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে ৮টি কোম্পানির শেয়ার। যেগুলো হলো-বিআইএফসি (৯ টাকা ৫০ পয়সা), ফারইস্ট ফাইন্যান্স (৫ টাকা ৯০ পয়সা), এফএএস ফাইন্যান্স (৫ টাকা ৪০ পয়সা), ফার্স্ট ফাইন্যান্স (৫ টাকা ৫০ পয়সা), ইন্টারন্যাশনাল লিজিং (৫ টাকা ৬০ পয়সা), প্রিমিয়ার লিজিং (৬ টাকা ৮০ পয়সা), পিএলএফএসএল (৩ টাকা) এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল (৮ টাকা ১০ পয়সা)।

এখাতে দেড় বছর আগে ২৭ মে অভিহিত মূল্যের নিচে ছিল প্রাইম ফাইন্যান্স (৭ টাকা ৭০ পয়সা।)। কোম্পানিটির শেয়ার এখন অভিহিত মূল্যের ওপরে উঠে বিনিয়োগকারীদের দুর্দশা লাঘব করেছে। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ টাকা ৫০ পয়সায়।

অভিহিত মূল্যের নিচে থাকা তৃতীয় খাত হলো মৌলভিত্তির ব্যাংক খাত। এ খাতের ৭টি শেয়ার অভিহিত মূল্যের নিচে ফ্লোর প্রাইসে আটকে গেছে। যেগুলো হলো-এবি ব্যাংক (৯ টাকা ৯০ পয়সা), ফাস্ট সিকিউরিটি ব্যাংক (৯ টাকা ৮০ পয়সা), গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক (৯ টাকা), আইসিবি ইসলামী ব্যাংক (৫ টাকা ৪০ পয়সা), ন্যাশনাল ব্যাংক (৮ টাকা ৩০ পয়সা), স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক (৮ টাকা ৮০ পয়সা) ও ইউনিয়ন ব্যাংক (৯ টাকা ৩০ পয়সা)।

ব্যাংক খাতে দেড় বছর আগে অভিহিত মূল্যের নিচে কেবল আইসিবি ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ওই সময়ে ন্যাশনাল ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৮ টাকা ৬০ পয়সায়, এখন লেনদেন হচ্ছে ৮ টাকা ৩০ পয়সায়। অন্যদিকে, আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন হয়েছিল ৪ টাকা ১০ পয়সায়, এখন লেনদেন হচ্ছে ৫ টাকা ৪০ পয়সায়।

এছাড়া, অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হচ্ছে প্রকৌশল খাতের অ্যাপেলো ইস্পাত ৮ টাকা ২০ পয়সায়, ওষুধ ও রসায়ন খাতের কেয়া কসমেটিকস ৬ টাকা ৪০ পয়সায় এবং ভ্রমণ ও বিনোদন খাতে বিডি সার্ভিস অবিক্রিত অবস্থায় ৫ টাকা ২০ পয়সায়।

খাতগুলোর মধ্যে দেড় বছর আগে অভিহিত মূল্যের নিচে লেনদেন হয়েছিল প্রকৌশল খাতের অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজ, গোল্ডেন সন ও ইয়াকিন পলিমার এবং ওষুধ ও রসায়ন খাতের ফার কেমিক্যাল।

ওই সময়ে ইয়াকিন পলিমার লেনদেন হয়েছিল ৭ টাকা ৫০ পয়সায়, অলিম্পিক এক্সেসরিজ ৭ টাকা ৮০ পয়সায়, গোল্ডেন সন ৮ টাকায় এবং ফার কেমিক্যাল ৫ টাকা ৬০ পয়সায়।

এখন সর্বশেষ অলিম্পিক অ্যাক্সেসরিজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১১ টাকায়, ইয়াকিন পলিমার ১৯ টাকা ২০ পয়সায়, গোল্ডেন সন ১৮ টাকা ২০ পয়সায় এবং ফার কেমিক্যাল ১০ টাকা ৬০ পয়সায়।

আর মিউচুয়াল ফান্ড খাতের ৩৭টি ফান্ডের মধ্যে ২৯টির ইউনিটই এখন লেনদেন হচ্ছে অভিহিত মূল্যের নিচে। কয়েকটির ইউনিট কেনাবেচা হচ্ছে অভিহিত মূল্যের অর্ধেকে। যদিও গত দুই বছর যাবত ফান্ডগুলো ইউনিটধারীদের ভালো ডিভিডেন্ড দিয়েছে। তারপরও ফান্ডগুলোর ইউনিট দামে কোন উন্নতি হয়নি। বরং গত এক বছর যাবত এ খাতে পতন প্রবণতা আরও ঘনীভূত হয়েছে।

পাশপাশি ব্যাংক, আর্থিক ও বস্ত্র খাতের কোম্পানির শেয়ারও যেন পাল্লা দিয়ে তলানিতে নামছে। ফ্লোর প্রাইস না থাকলে অভিহিত মূল্যের নিচে কোম্পানির সংখ্যা হয়তো সেঞ্চুরি ছাড়াতো। বিপরীতে লাগামহীনভাবে দৌঁড়াচ্ছে দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ কোম্পানির শেয়ার। বাজার বিশ্লেষকরা বলছন, শেয়ারবাজারে এই সঙ্গতিহীন পরিস্থিতি কোনোভাবেই স্থিতিশীল বাজারের জন্য শুভ নয়।

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে