ঢাকা, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাত ৮টার পর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে তোলা হয় ২২ কোটি টাকা!

২০২৩ ফেব্রুয়ারি ১৯ ০৯:৪৬:৫৫
রাত ৮টার পর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে তোলা হয় ২২ কোটি টাকা!

ব্যাংক থেকে রীতিনীতি বহির্ভূতভাবে রাতে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনাটিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৩ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে পাঠানো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, ইনফ্রাটেক কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের অনুকূলে অনুমোদিত ১০০ কোটি টাকার ঋণপত্র সীমার বিপরীতে কীভাবে সীমাতিরিক্ত ঋণপত্র স্থাপন করা হয়েছে, সে বিষয়ে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে হবে। একই সঙ্গে রাত ৮টার পর কোম্পানিটির হিসাব থেকে নগদ ২২ কোটি ৬০ লাখ টাকা উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়েও পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ব্যাংকিং রীতিনীতির চরম লঙ্ঘনপূর্বক রাত ৮টার পরে নগদ লেনদেন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের কর্মকর্তারা গুরুতর অনিয়ম সংগঠন করেছেন। এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অফসাইট সুপারভিশন’ বিভাগ থেকে পাঠানো ওই চিঠি পেয়েছেন বলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘‌কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে চিঠি দিয়েছে, সেটি আমরা পেয়েছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চিঠির জবাব দেয়া হবে।’

যে রাতে গ্রাহক টাকা তুলে নিয়েছিলেন, সেদিন বিকালে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সভায় নিয়মবহির্ভূতভাবে ইনফ্রাটেক কন্সট্রাকশনের নামে ঋণটি নবায়ন করা হয়। নিয়মবহির্ভূতভাবে ঋণটি বিকালে নবায়ন করার পর সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে অনুমোদনপত্র ইমেইলে গুলশান শাখায় পাঠানো হয়। এরপর রাত ৮টা ২৩ মিনিট থেকে ৯টা ৪ মিনিটের মধ্যে পাঁচটি লেনদেনের মাধ্যমে নগদে টাকা তুলে নেয়া হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইনফ্রাটেক কন্সট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড নামের কোম্পানিটির কর্ণধার হলেন আলী হায়দার রতন। তিনি ন্যাশনাল ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে রাখা সিকদার পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়, গত ১১ নভেম্বর ইনফ্রাটেক কন্সট্রাকশনের ১০০ কোটি টাকা ঋণপত্রের সীমার বিপরীতে সাইট ঋণপত্রের বকেয়া স্থিতি ছিল ৩৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা। একই সময়ে ইউপাস ঋণপত্রের বকেয়া স্থিতি ছিল ১১১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওই গ্রাহকের বকেয়া স্থিতির পরিমাণ ১৪৭ কোটি ৮৫ কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। অনুমোদিত ঋণপত্র সুবিধার বিপরীতে ৪৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ স্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। ১০০ কোটি টাকা ঋণপত্র সীমার বিপরীতে কীভাবে অতিরিক্ত ঋণপত্র স্থাপন করা হয়েছে, সেটি বোধগম্য নয়।

প্রসঙ্গত, ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি চলছে এক দশকের বেশি সময় ধরে। দীর্ঘদিন অনিয়ম-দুর্নীতির আবর্তে ঘুরপাক খাওয়া ব্যাংকটিকে টেনে তুলতে সম্প্রতি তৎপর হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যেই গত ১৮ জানুয়ারি ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডি মেহমুদ হোসেন ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন। তবে শেষ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে এমডি পদে মেহমুদ হোসেন ফিরে এসেছেন।

এমডি পদত্যাগ করার পর গত ২২ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণে তৃতীয় দফায় বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ‘অফসাইট সুপারভিশন’ বিভাগ থেকে ইস্যু করা চিঠিতে বলা হয়, বেসরকারি খাতের ব্যাংকটি গ্রাহকদের ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ সুবিধা দিতে পারবে না। বিদ্যমান অনুমোদিত ১০ কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। অন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণও অধিগ্রহণ করতে পারবে না ন্যাশনাল ব্যাংক। শতভাগ নগদ মার্জিন ছাড়া কোনো ঋণপত্রও খুলতে পারবে না ব্যাংকটি। আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

বেনামি ঋণ ও ঋণ বিতরণে অনিয়মের কারণে এর আগেও দুই দফায় ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথম দফায় ২০২১ সালের ৩ মে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রভাবশালীদের তদবির ও চাপের মুখে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সে সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে। ওই বছরের ৩০ ডিসেম্বর ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়। এরপর আবারো পরিস্থিতির অবনতি হলে গত বছরের মে মাসে বড় ঋণ বিতরণে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। তিন মাস পর ফের ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ বিতরণ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এবার তৃতীয় দফায় ব্যাংকটির বড় ঋণ বিতরণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নোমান/

ট্যাগ:

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর